শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

উত্তর সম্পাদকীয় | প্যালেস্তাইন সঙ্কটে ঘি ঢালছে ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনা, অজানা কবে থামবে মৃত্যুমিছিল

AD | ২৯ মার্চ ২০২৫ ১২ : ১৯Abhijit Das


বুড়োশিব দাশগুপ্ত

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার পর আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে ভোলবদলের প্রস্তুতি নিয়েছে বিশ্ব। ট্রাম্প কখনও চেয়েছেন স্বাধীন দেশ কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে। কখনও চেয়ছেন গ্রিনল্যান্ড ও গাল্ফ অফ মেক্সিকোর নাম বদলাতে। আমেরিকার চিরশত্রু রাশিয়া কখনও আবার ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে চেয়েছে। পাশাপাশি, ট্রাম্প চেয়েছেন মধ্য এশিয়ায় ক্ষমতাবিস্তার করতে আবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে পর্যটনস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে।

ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের দীর্ঘ বিবাদে গৃহহীন মৃত্যুভয় নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলির কাছে ট্রাম্পের শেষ অভিপ্সা বড়ই বেদনাদায়ক বলা চলে। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার পরে সাত লক্ষ ছিন্নমূল ফিলিস্তিনির আশ্রয় খুঁজে পাওয়ার লড়াই থেকেই এই সঙ্কটের সূত্রপাত। লেবানন, জর্ডন ও অন্য কয়েকটি জায়গায় একাধিক ফিলিস্তিনি প্রজন্ম আজীবন রয়ে গিয়েছে ছিন্নমূল হিসেবেই। ১৯৬৭ সালে ইজরায়েল পেশিশক্তি প্রদর্শন করে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে, তাতে ফের প্যালেস্তাইনের জীবনযাপন ব্যাহত হয়। বর্তমানে ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের যুদ্ধ বাসভূমির অধিকার, আত্মপরিচয় ও নিরাপত্তার লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে একদিকে যেমন প্যালেস্তাইনে জন্ম নিয়েছে হামাসের মতো সহিংস শক্তি। অন্যদিকে, আমেরিকার সাহায্যে শক্তি প্রদর্শন ও ক্ষমতা দখলের কাজ চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল।

এ কথা অজানা ট্রাম্প এই দীর্ঘ সংঘর্ষের ইতিহাস জানেন কি না। প্রাথমিকভাবে তিনি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধ করার ধমক দিলেও দ্রুত হোয়াইট হাউসের মত ঠাওর করেন। তারপরেই বলেন, গাজা-কে তিনি পর্যটনস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে চান। রাষ্ট্রপুঞ্জ এই সঙ্কট মেটাতে দুই ভিন্ন দেশের নীতির কথা বলেছিল। কিন্তু সেখানে আমেরিকা ভেটো দেওয়ায় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ অসম্ভব হয়েছে।

ট্রাম্প শুধু রাজনীতিক নন। প্রাথমিকভাবে তিনি একজন শিল্পপতি। তিনি ইউক্রেনকে তখনই সমর্থন করবেন, যখন সেখান থেকে কোনও বাণিজ্যিক লাভ তাঁর হবে। তিনি চাইবেন, সে দেশের খনিজ-ঠাসা ভূখণ্ডের উপর অধিকার কায়েম করতে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে ঝগড়াঝাঁটির পর তিনি জেলেনস্কিকে হুমকি দিয়ে পথে আনার চেষ্টা করলেন। প্যালেস্তাইনের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই। তিনি সে দেশকে পর্যটনস্থল বানাতে চান, মার্কিনদের ফূর্তির জন্য।

দুই বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তির জন্য তৈরি হয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের সমস্যার দিকে তাকালে মনে হয় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ। হিটলার কর্তৃক জিউদের প্রতি উৎপীড়ন হিটলার-বিরোধী শক্তিকে বাধ্য করেছিল উৎপীড়িতদের জন্য এই পৃথিবীতে একটি দেশ খুঁজে দেওয়ার। যাতে তাঁরা স্থায়ী বসবাসের জায়গা পান। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ফল না ভেবেই ইজরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টি চিরকালীন দ্বন্দ্বের জন্ম দিল। রামের টাকা শ্যামকে দিয়ে সমস্যা কি আর মেটে? ঝামেলা মেটাতে গিয়ে ছিন্নমূল হতে হয় ফিলিস্তিনিদের।

ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সঙ্কট নিয়ে ভারতের অবস্থান সরু সুতোর উপর দাঁড়িয়ে থাকার মতো। না প্যালেস্তাইনের দিকে, না ইজরায়েলের দিকে। অনেকে একে সুযোগসন্ধানী বললেও, অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে মনে হয় বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষিতে এটিই ঠিক। ভারতের ঔপনিবেশকতা-বিরেধী অবস্থান তাকে প্যালেস্তাইনের কাছাকাছি এনেছে। ১৯৩৮-এ মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, প্যালেস্তাইন আরব দুনিয়ার অংশ। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতও দুই দেশ তত্ত্বের সমর্থক হলেও, পৃথিবীর অন্য শক্তিগুলির মতোই তাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইদানিংকালে আবার ভারত ইজরায়েলের বড় সমর্থক হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইজরায়েল সফর করেছেন। বর্তমানকালে ভারতে সামরিক অস্ত্রভাণ্ডার সরবরাহকারী দেশগুলির তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইজরায়েল। তার মধ্যে রয়েছে স্পাই-সফটওয়্যার যা নিয়ে কয়েকদিন আগে দীর্ঘ বিতর্কও হয়।

ভারতের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিত নেহরু থেকে ইন্দিরা গান্ধী হয়ে নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত নানা ধাপে বদলেছে। ইন্দিরা গান্ধীর সময় ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ছিল তলানিতে। ইন্দিরার বাংলাদেশ সমর্থন আমেরিকার থেকে তাঁকে দূরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের হালহকিকত জানার পর থেকেই ভারত-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি হয়। একই ভাবে ইজরায়েলের সঙ্গেও হয় সম্পর্কের উন্নতি। নরেন্দ্র মোদি এই ভাল সম্পর্কের সুযোগে ইজরায়েলকে ভারতের আরও নিকটে টানার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, ইজরায়েলের আধিপত্যবাদী মনোভাবে বিরোধীতাও করেছেন মোদি। ২০২৪-এ আর্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছে ভারত।

কিন্তু ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের লড়াই বোধহয় থামার নয়। ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনায় পরিস্থিতি অবনতি হলে অবাক হওয়ার কোনও অবকাশ থাকবে না।


Israel-Palestine conflictUSADonald TrumpBenjamin NetanyahuHamas

নানান খবর

সোশ্যাল মিডিয়া